আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
ফলের রাজা আম এটি একটি মৌসুমী ফল। আম খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া
দুষ্কর। আমের মধ্যে প্রচুর উপকার রয়েছে মানব দেহের জন্য আবার কিছু ক্ষতিকর দিক
রয়েছে। আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
আম অত্যন্ত সুস্বাদু ফল। আমে রয়েছে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি। মানব দেহের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই কাঁচা আম ও পাকা আম সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জেনে নেই।
সূচীপত্রঃ আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- আমের যত উপকারিতা
- আমের ক্ষতিকর দিক
- আম খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়ে ?
- কাঁচা আমের কত গুন !
- ফরমালিন যুক্ত আম খাওয়ার ভয়াবহতা
- আম খেলে কি এলার্জি হতে পারে
- আম খাওয়ার নিয়ম ও সময়
- গর্ভাবস্থায় আম খেলে কি হয়
- শেষ কথাঃ
আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আম হল একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ফল যা গ্রীষ্মকালে পাওয়া যায়। আমের বৈজ্ঞানিক
ম্যাইংগিফেরা ইন্ডিকা। আম বিশ্বের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় ফল যা প্রতিটা
দেশেই চাষ হয়। আম কে ফলে রাজা বলা হয় তার অসাধারণ স্বাদের ও পুষ্টির জন্য।
বর্তমানে জনপ্রিয় আমের প্রকারভেদ হলো আমরুপালি ক্ষীরশা
পাত, বারীফর, হিম সাগর, ল্যাংড়া, আশিনা, ফজলি ইত্যাদি। এইগুলো নাম
জাতীয় ভাবে পরিচিত যা প্রতিটি প্রকারের আমি নিজস্ব পুষ্টিগুণ ও স্বাদ দিয়ে
মানুষকে আকৃষ্ট করে।
আমে ভিটামিনের সাথে পটাসিয়ামের পরিমাণ ও বেশি থকে, যা হৃদরগের ঝুঁকি কমাতে
সাহায্য করে।
অনেক গুনে গুননিত আম। কিন্তু অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ
বিষয় গুলো আলোচনা করা হয়েছে। আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক আছে এ বিষয়ে ১০
টি উপকারিতা ও অপকারিতা নিম্নে আলোচনা করা হল
আমের যত উপকারিতা
আমের স্বাদের সঙ্গে নতুন করে পরিচয় করে দেওয়ার কিছু নাই। গরমের মধ্যে কে না
খেতে চাই কাঁচা ও পাকা আম। আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা অভাব নেই।
আচ্ছা আমের কথা শুনলে আমাদের মুখে পানি চলে আসে। কাঁচা আম শুধু খেতে মজা না,
কাঁচা আমে প্রচুর পুষ্টি রয়েছে যা পুষ্টি সমৃদ্ধ। পাকা আম এমনিতেই খেতে অনেক
সুস্বাদু আম তো খাবেন তার আগে জেনে নিন পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা।
- কাঁচা আম ঃ শরীরকে শীতল রাখে গরমকালে শরীরের অতিরিক্ত তাপ কমাতে কাঁচা আম দারুন ভূমিকা রাখে। কাঁচা আম হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে । ভিটামিন তো আছেই সাথে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম। কাঁচা আমের একেবারে চিনি নেই তাই যারা ডায়েট করছেন বা ডায়াবেটিসের রোগী তারা অনায়াসে খেতে পারেন কাঁচা আম। কাঁচা আম শরবত করে খেতে পারেন বা চাটনি অথবা আমের তরকারি ও খেতে পারেন।
- পাকা আমঃ পাকা আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পটাসিয়াম যার শরীরে রক্তস্বল্পতা দূর করে এবং হার্ট সুস্থ রাখতে। পাকা আমে রয়েছে উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি, প্যাকটিন ও আঁশ। যা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। ত্বক সুস্থ রাখতে ভূমিকা রাখে এই পাকা আম ত্বক ভিতর থেকে পরিষ্কার রাখে। এরকম অনেক গুণে গুণান্বিত আম নিম্নে সবকিছু বর্ণনা দেওয়া হল।
আমের ক্ষতিকর দিক
আম যেমন মানবদেহের অনেক উপকার করে থাকে তেমনি এর ক্ষতিকারক দিকের অভাব নেই। আমে
রয়েছে অনেক ক্যালরি যার শরীরের জন্য অনেক সময় কাল হতে পারে। অতিরিক্ত আম খেলে
শরীরের ওজন বাড়তে পারে। আমের প্রোটিন ল্যাটটেক্সের মত তাই এলার্জির সমস্যা
হতে পারে। কোন কোন জাতের আমে ডায়াবেটিস করে দিতে পারে কেননা কিছু আম
প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি হয়।
অতিরিক্ত আম খেলেও অনেক সমস্যা হয় যেমন হজমের সমস্যা। অ্যালার্জি জনিত
ব্যক্তিদের আম খেলে সমস্যা দেখা দিলে আম না খাওয়া ভালো কেননা আমি অ্যালার্জি দেখা
দেয়। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আম খাওয়ার পরে তেতো খাবার খাওয়া যাবেনা।
যেমন-করলা এইসব তেতো খাবার ভুলেও খাওয়া যাবে না। তাই আম খাওয়ার উপকারিতা ও
অপকারিতা বিস্তারিত জেনে নিন।
আম খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়ে ?
ডায়াবেটিস রোগীদের আম খাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরিমাণ। আমের
পরিমাণ এর উপর ব্লাড গ্লুকোজ নির্ভর করে। টুকরা করে কাটা ১/২ কাপ পরিমাণ খাওয়া
যেতে পারে। সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণ আম খেলে এবং শর্করার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আম
খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকার। তাই যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা সারাদিনে
মাঝারি আকারের একটি আম খাবেন।
তবে আম খাওয়ার পর এমনিতেও মানুষের রক্তে সুগারের পরিমাণ কিছুটা বেশি হয়ে যায়।
সেই সাথে অন্যান্য শর্করার সাথে আম বেশি খেলেও ডায়াবেটিস বাড়তে পারে।
ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞরা জানা, যদি চিনে সম্পূর্ণরূপে অনিয়ন্ত্রিত থাকে অথবা চিনির
মাত্রা বেশি হয় তবে আম খাওয়ার আগে চিনির মাত্রা কমিয়ে আনতে হবে। সুতরাং
আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে আম খেতে হবে।
কাঁচা আমের কত গুন !
অনেকে হয়তো জানেন না, কাঁচা আম শুধু স্বাদই ভালো নয় স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক
উপকারী। কাঁচা আমে রয়েছে ১০০ গ্রাম পটাশিয়াম থেকে ৪৪ ক্যালরি। কাঁচা থাকা
ভিটামিন ২৫ ধারনের ক্যারোটেনয়েডস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এতে করে
দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। কাঁচা আম ওজন কমাতেও ভালো ভূমিকা রাখে।
কাঁচা আমে আরও রয়েছে ভিটামিন বি ফাইবার যা কোলেস্টেরল কমানোর পাশাপাশি রক্ত
সঞ্চালনেও সাহায্য করে । কাঁচা আমে আছে প্রাকৃতিক হজমকারী উপাদান যা পেটের
স্বাস্থ্য ভালো রাখে বদহজম এসিডিটি সমস্যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে । কাঁচা আমে
রয়েছে আয়রন যা রক্ত স্বল্পতার সমস্যার সমাধান করে থাকে।
ফরমালিন যুক্ত আম খাওয়ার ভয়াবহতা
ফরমালিন যুক্ত আম সাধারণত হলুদ রংয়ের হয়ে থাকে। এ সকল ফরমালিন যুক্ত
আম একেবারেই খাবেন না খেলে কিডনি নষ্ট হতে পারে। ফরমালিন যুক্ত আম গ্রহণের ফলে
মানবদেহে ক্যান্সার, অকাল মৃত্যু, চোখের কণিকায় ক্ষতিগ্রস্ত দৃষ্টিশক্তি কমে
যাওয়া নানা রকমের শরীরের সমস্যা হতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে লিভারের সমস্যা ও হতে
পারে সাথে শ্বাসনালীতে ক্যান্সার হয়।
আরও পড়ুনঃ
কোটি টাকা আয় করার উপায়
আমে অতিরিক্ত মাত্রার ফরমালিন থাকলে খাওয়ার সাথে সাথে পেটে পিড়া
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকলাঙ্গ হয়ে যাওয়া শরীর দুর্বল হয়ে পড়া সহ নানান
সমস্যা দেখা দেয়। তাই আসুন আমরা সতেজ আম খাওয়ার চেষ্টা করি যাতে করে
ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে পারি। এবং আমের প্রকৃত উপকার নিতে পারি। আম খাওয়ার
উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে আম খাই।
আম খেলে কি এলার্জি হতে পারে
আম খেলে সাধারণত যাদের অ্যালার্জি সমস্যা থাকে তাদের অ্যালার্জি হয়।
এছাড়াও আম বেশি খেলে অ্যালার্জি পরিমাণ বাড়ে বা নতুন ভাবে এলার্জির সমস্যা তৈরি
হয়। যাদের এলার্জির সমস্যা আগে থেকেই থাকে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া আম না
খাওয়াই ভালো। কেননা আমে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে। যাদের ত্বকে এলার্জির
প্রবণতা আছে, তারাও আম খাওয়া নিয়ন্ত্রণে আনুন। এদের আম খেলে চোখ জ্বালা,
হাঁচি, ঠান্ডা লাগা পেট ব্যচি, ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
আবার আম খাওয়ার পরে পানি পান করলেও সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন এসিডিটি। তাই আম
খাওয়ার সাথে সাথে পানি পান করা থেকে দূরে থাকুন। এমনকি সাথে সাথে পানি পান করলে
পেট ব্যথা হতে পারে। তাই আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে আপনার জন্য কখন আম
খেলে এলার্জি হবে না বুঝে আম খাওয়ার স্বাদ নিন।
আম খাওয়ার নিয়ম ও সময়
তীব্র গরমের কাঁচা ও পাকা আমের স্বাদ এনে দিতে পারে স্বস্তি। যেমন আমের শরবত,
আমের চাটনি, আম দিয়ে তরকারি আরও নানা পদের খাবার তৈরি করে খাওয়া যায়।
তাছাড়া আমের আচার বেশ জনপ্রিয় এটি ছাড়া বছর ধরে খাওয়া যায়। আমের আচার খাবারের
স্বাদ কি গুণ বাড়িয়ে দেয়। এই তীব্র গরমে একটি আম হতে পারে অনেক বড় স্বস্তির
সমাধান।
সাধারণত গাছ থেকে পেড়েই আমরা পাকা আম খেতে পছন্দ করে থাকি। গাছে থাকা আমটি দেখতে
যেমন সুন্দর খেতে পারলে মন ভরে যাবে। পাকা আম জুস করে খেতে পারেন এতে শরীরে
তৃপ্তি এনে দিবে। ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা তাই
পাকা আম বুঝে খেলে শরীরের অনেক রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ে।
আম খাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে মধ্য সকাল অর্থাৎ সকালের নাস্তা ও দুপুরের
খাবারের মাঝের সময়। আম ও দই একসঙ্গে খাবেন না দইয়ের সঙ্গে কখনো আম মিশিয়ে
খাবেন না। আম খাওয়ার পরে পানি খাবেন না। খাওয়ার আগে আমটি ভিজিয়ে রাখুন ,
খাওয়ার আগে কিছুক্ষণ সময় অবশ্যই ভিজিয়ে রাখা জরুরী। রাতে খাবারের পর আম একদমই
খাবেন না।
গর্ভাবস্থায় আম খেলে কি হয়
আম একটি সুস্বাদু খাবার কে না খেতে চায়। তবে আপনি যদি গর্ভাবস্থায় থাকেন তাহলে
আম খাওয়ার ব্যাপারে কিছুটা সতর্কতা মেনে চলতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ নিতে
পারেন। আমের মধ্যে থাকা আইরন যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে
ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে, ভিটামিন সি রক্তের ফ্রী রেডিক্যালের মোকাবিলা
করে। ক্যালরি বেশি থাকার জন্য গর্ভাবস্থায় তৃতীয় পর্যায়ে আম খাওয়া জরুরী
এ সময় বেশি এনার্জির প্রয়োজন হয়।
গর্ভাবস্থায় আম খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ আম অনেক পুষ্টিকর। কিন্তু অনেক
সময়ই আম পাকানোর জন্য ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করা হয়। যা গর্ভাবস্থায়
ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। যদি আপনার আগে থেকে অন্যান্য রোগ থেকে থাকে তাহলে আম না
খাওয়াই ভালো। আবার বেশি আম খেলে ডায়রিয়া হতে পারে সাথে অন্যান্য রোগ।
শেষ কথাঃ
আম ফলের রাজা আম খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আম খেলে
যেমন উপকার পাওয়া যায় তেমনি আমের কিছু ক্ষতিকর দিকও আছে। উপরে আলোচনা করেছি, আম
কখন খাবেন, আম খেলে কি হয়, কখন আপনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এসব তথ্য জানলে আপনি কখনোই
স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বেন না। মানবদেহের জন্য উপকার ক্ষতিকর দিক নিয়ে এই পোস্টটি
আলোচনা করা হয়েছে।
কাঁচা ও পাকা আম কখন খেলে আপনার জন্য ভালো ও কখন খেলে আপনার জন্য বিপদ হতে পারে
।
আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জানলে আপনি কখনোই বিপদের সম্মুখীন হবেন না। আম
একটি মৌসুমী ফল আম দিয়ে ব্যবসা করেও অনেক লাভ করা সম্ভব। পরিশেষে তাই আসুন আমরা
জেনে নেই আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা। ধন্যবাদ
My favourite fruit is mango. যেহেতু আমি রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জে থাকি এখানে পিওর ফরমালিনমুক্ত আম পাওয়া যায়।