ঈমান ও আকিদার মধ্যে পার্থক্য
ঈমান ও আকিদার মধ্যে পার্থক্য এটি হচ্ছে একটির চেয়ে আরেকটি বড়। ঈমান হচ্ছে কথা ও কাজের নাম। অন্তরের কথা ও কাজ, মুখের কথা ও কাজ শরীরে প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কাজের মাধ্যমে আল্লাহকে তা গুণ ও অধিকারসমূহের স্বীকৃতি দেওয়া।
আকিদা হচ্ছে বিশ্বাস, আকিদা এমন একটি বিশ্বাস যেটি আপনি যে কোন বিষয়ের উপরে বিশ্বাস স্থাপন করলে
তাকে আকিদা বলে। আসুন আমরা ঈমান ও আকিদার মধ্যে পার্থক্য জেনে নেই এবং
বিভ্রান্তি ধারণা দূর করি।
সূচিপত্রঃ ঈমান ও আকিদার মধ্যে পার্থক্য
ঈমান ও আকিদার মধ্যে পার্থক্য
ঈমান ও আকিদার মধ্যে পার্থক্য শব্দ দুইটি ভিন্ন হলেও পরিভাষিক অর্থে
পার্থক্য নাই। ঈমান হচ্ছে মুখের স্বীকৃতি বা বাস্তবিক কর্মকান্ড এর নাম। আর
আকিদা হচ্ছে অন্তরে লালন করা বিশ্বাস। ঈমান ও আকিদার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক
এমন একটি ছাড়া আরেকটি হয় না। নিজের মধ্যে ইমান আনতে গেলে সর্বপ্রথম
আকিদা অন্তরে অভিপ্রায় করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ কাতারে কোন কাজের চাহিদা বেশি
অনেক আলেম বা স্কলার বলে থাকে আকিদা বলতে ধর্ম বিশ্বাসের সকল মত প্রচলন বৈচিত্র
বর্ণালীকে বোঝায় আর ঈমান শুধু নির্দিষ্ট ইসলাম ধর্ম বিশ্বাসকে বুঝায়। সকল
বিভ্রান্তির উত্তর বা মনে প্রশ্নের নিয়ে সকল তথ্য আলোচনা করা হলো। আশা
করছি সম্পূর্ণ পোস্ট পড়লে ঈমান ও আকিদার মধ্যে পার্থক্য নিয়ে নিয়ে কোন
প্রকার দুর্বলতা নিজেদের মধ্যে থাকবে না। তাই আসুন আমরা জেনে নেই বিস্তারিত।
আকিদা কি বিস্তারিত
আকিদা হচ্ছে আরবি আল আকিদাহ যার বহুবচন আল-আকা'ইদ, যা ইসলামিক ধর্মতত্ত্ব
নামেও পরিচিত। মানুষ যা সত্য বলে বিশ্বাস করে এবং যাকে দিন হিসেবে গ্রহণ করে
তাই মূলত আকিদা। বিশ্বাস বা ধর্ম বিশ্বাস বলতে মুসলিম সমাজে সাধারণত
দুইটি কথা বহুল পরিচিত ঈমান ও আকিদা। তবে আল কুরআন ও হাদীসে ঈমান শব্দটি
ব্যবহার করা হয়েছে। এটি মূলত ব্যবহার করত হিজরি দ্বিতীয় শতক থেকে তাবেয়ীগণ ও
পরবর্তী এর ইমাম গণ। ইসলাম বিষয়ের ফতোয়া দিতে ঈমানের পরিভাষা হিসেবে ব্যবহার
শুরু করেছিলেন আকিদার।
ইসলামের ঈমান আলোচনা করার ক্ষেত্রে সাধারণত দুইটি শব্দ ব্যবহৃত হয়-ঈমান ও
আকিদা। ইসলামের নিয়ম মেনে চলা বা বিশ্বাস করা সাথে কোন ধরনের মুনাফিক না
দেওয়াই হচ্ছে আকিদা। আকিদা আভিধানিক অর্থে শক্ত করা বা মজবুত
করা ইত্যাদি বুঝায়। যা স্রষ্টার সত্তা, নাম, গুণ, অধিকারসমূহের আন্তরিক
স্বীকৃতি দেওয়া উপর বিশ্বাস স্থাপন করা।
আকিদার মৌলিক বিষয় কি কি?
ইসলাম ধর্মের জন্য আকিদার মূল বিষয় বলতে বুঝানো হয়েছে নামাজ, রোজা, হজ্ব,
যাকাত, পরিবার, সমাজ, কর্ম ইত্যাদির বিশ্বাস। আকিদার মৌলিক বিষয় বলতে বোঝায়
ঈমান। যেমন-আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, রাসূল (সা.) এর প্রতি ঈমান, আখিরাতের প্রতি
ঈমান বা আল্লাহর সকল সৃষ্টির প্রতি সম্মান বা বিশ্বাস। এই সমস্ত বিষয় গুলোকে
যদি কেউ অবিশ্বাস করে সে ব্যক্তি কাফের হয়ে যাবে।
অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাস, আল্লাহর একত্ববাদ, মহত্ব আল্লাহর গুণাবলী ও বিশাল
সাম্রাজ্যের বিশ্বাস বা অসীম ক্ষমতার বিশ্বাস, রাসূল (সা.) এর প্রতি
বিশ্বাস এবং তার নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা উপর বিশ্বাস। কুফরি
বাতিল বা অসত্য হওয়ার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন, ইসলামে অবিশ্বাসী ও আল্লাহর সাথে
অপরকে শরীককারী সকলের প্রতি অস্বীকার জ্ঞাপন, আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ হওয়া
হাসরের মাঠে তার পুরস্কার ও পরিণতির প্রতি বিশ্বাস রাখা ইত্যাদি। আল্লাহর
দেওয়া প্রতিটি নিয়ামতের উপর বিশ্বাসই হচ্ছে আকিদার মৌলিক বিষয়।
বিশুদ্ধ আকিদাঃ গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা
বিশ্বাস বা দর্শন মানুষের জীবনে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা তার জীবনের
গতিপথ নির্ধারণ করে দেয়। এটা এমন এক বিশ্বাস যা অবলম্বন করেই মানুষ তার পুরোটা
জীবন পরিচালনা করে। জীবন দর্শনকে কেন্দ্র করে দুনিয়ার বুকে মানুষ আবর্তিত
হচ্ছে। এই সকল বিষয় ইসলামের প্রতি ঈমান আনতে সাহায্য করে, আর এই নামকে আকিদা
বলা হয়। তাই একজন মুসলিমের জীবনে আকিদা ও বিশ্বাসের দর্শন এমনই এক
অপরিহার্য বিষয়।
মানুষ যুগে যুগে ঈমান হারিয়েছে এর মূল কারণ আকিদার ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি। আকিদা
এক অতুলনীয় শক্তি যা মানুষ কে তার আদর্শের প্রতি শত ভাগ আস্থাবান করে তোলে।
বিশ্বাসের বিশুদ্ধতা ব্যতীত কোন মানুষ প্রকৃত অর্থে মুসলমান হতে পারবে না। নিজের
প্রতিটি কথা ও কর্ম যদি বিশুদ্ধ আকিদা ও বিশ্বাস থেকে নির্মিত নির্গত না হয় তবে
তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই ইসলামে বিশুদ্ধ আক্বিদা
খুব অপরিহার্য।
আকিদা শব্দের বিভিন্ন ব্যবহার
আকিদা শব্দটি বিভিন্নভাবে পরিচিত। যেমন-তাওহীদ, ফিকহুল আকবার, শরিয়াত, ইমান,
সুন্নত, উসুল উদ্দিন ইত্যাদি নামে ব্যাখ্যা করা হয়। সবগুলাকে এক শব্দে আকিদা
বলে। এগুলো সাধারণত আকীদার পরিভাষা হিসাবে ব্যবহার করা হয়। কুসংস্কার
দৃষ্টিভঙ্গি এসবের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই বা আকিদারও কোন সম্পর্ক নেই।
তবে ইসলাম ধর্মে অন্যান্য পরিভাষা ব্যবহার করা হয় না সাধারণত। সাধারণভাবে ধর্ম
সম্পর্কিত বা ধর্মহীন বিভিন্ন বাতিল চিন্তা ধারাকে আকিদা বলে এর পরিভাষিক
হিসাবে ব্যবহার করে। পরিভাষিক বিভিন্ন ধর্মের ব্যবহার হয় যেমন-ইহুদী,বৌদ্ধ,
হিন্দু খ্রিস্টান ইত্যাদি। তাই ইসলাম ধর্মে ঈমান ও আকিদার মধ্যে পার্থক্য বুঝা
জরুরী।
ঈমান কাকে বলে
ঈমান শাব্দিক অর্থ প্রচলিত মতে বিশ্বাস বলা হয়। ঈমান আভিধানিক অর্থ স্বীকার
করা, স্বীকৃতি দেওয়া, আনুগত হওয়া মতান্তরে উপর বিশ্বাস করা। এটি কুফর বা
অস্বীকার করা অবাধ্যতার বিপরীত। একজন মানুষকে মুসলিম হতে হলে প্রথমেই ঈমান
আনতে হবে। ঈমান ও আমল পরস্পর জড়িত। ঈমান হচ্ছে আল্লাহ তা'আলা ও তার গুণাবলী
সম্পর্কে অন্তরে বিশ্বাস স্থাপন করা।
রাসুল (সা.) ও আল্লাহ
তা'আলার তরফ থেকে তাঁর বান্দাদের কাছে যা কিছু পৌঁছেছে তার সমস্তই সত্য ধারণা
করতঃ বিশ্বাস স্থাপন করা এবং তদানুযায়ী আমল করা একেই সাধারণ অর্থে ঈমান
বলা হয়। ইসলামী শরীয়ত একে মানে মুজমাল নামে আখ্যায়িত করেছে। ঈমান ও
আকিদার মধ্যে পার্থক্য সাধারণত নাই দুটোই বিশ্বাস।
ঈমানের মৌলিক বিষয়ে কয়টি
ঈমানের মৌলিক বিষয় হিসেবে সাতটি ধরা হয়। মুমিন হওয়ার জন্য
সাতটি বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়। ঈমানের মৌলিক বিষয়গুলো
জানা অত্যন্ত জরুরী সাথে ঈমান ও আকিদার মধ্যে পার্থক্য, তাহলে সঠিকভাবে
আমল করা যাবে। আসুন আমরা জেনে নেই ঈমানের সাতটি বিষয় এগুলো কি কি। নিম্নে
দেওয়া হল-
- আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস।
- নবী রাসুলগণের প্রতি বিশ্বাস।
- ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস।
- অসীম কিতাবের প্রতি বিশ্বাস।
- আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস।
- তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস।
- মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের প্রতি বিশ্বাস।
ভালো কাজের পুরস্কার ও মন্দ কাজের শাস্তি অবশ্যই দেওয়া হবে। সেখানে মুমিন
ব্যক্তি ও আল্লাহর রাসূলের প্রিয় পাত্রগণ অবশ্যই শাস্তি থেকে মুক্তি লাভ
করবেন। সুতরাং ঈমান আনতে হলে ওপরের সাতটি বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস
আনা অপরিহার্য।
কেমন ছিল সাহাবীদের ঈমান
আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কোরআনে আমাদেরকে সাহাবায়ে কেরামের মত ঈমান আনতে আদেশ
করেছেন। আল্লাহ তা'আলা বলেন-
" আর যখন তাদেরকে বলা হয় অন্যেরা যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান
আনায়ন কর, তখন তারা বলে আমরাও কি ঈমান আনব বোকদের মতো!! মনে রেখো
প্রকৃতপক্ষে তারাই বোকা কিন্তু তারা তা বোঝেনা"।(সূরা বাকারাঃ আয়াত নাম্বার
১৩)
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা'আলা সাহাবী যুগে মুনাফিকদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, তোমরা
সাহাবীদের মত ঈমান আনো। এই আয়াতটি মূলত মুনাফিকদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন। এই
আয়াতসহ অন্যান্য আয়াতেও উল্লেখিত আছে সাহাবীদের ঈমান সম্পর্কে। তাই আল্লাহ
তা'আলা আমাদের সাহাবায়ে কেরামদের মত হওয়ার তৌফিক দান করুন।
মানুষের ঈমান আনার পরিণতি
ঈমান আল্লাহর দেওয়া অনেক বড় একটি নিয়ামত, আল্লাহর রহমত ছাড়া ঈমান আনতে কেউ
পারেনা। ঈমানের মাধ্যমে মানুষ দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ লাভ করতে পারে। আল্লাহ
তা'আলা মুমিনদের ভালবাসেন। আখেরাতে তিনি মুমিনদের চিরশান্তির জান্নাত
দান করবেন। ইসলামের শুরুতেই ঈমান আনতে হবে তারপরে তা পালন করতে হবে। মুমিন
ব্যক্তি শুধু আখিরাতেই নয় দুনিয়াতেও শ্রদ্ধা সম্মান কল্যাণ ও সাফল্য লাভ করবে।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন
"নিশ্চয় যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের আপ্যায়নের জন্য রয়েছে ফেরদাউস
জান্নাত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে"। (সূরা আল কাহফঃ আয়াত নাম্বার
১০৭-১০৮)
আকিদার সাথে ঈমান থাকা না থাকার সম্পর্ক কি?
আকিদা একটি ব্যাপক জিনিস। একজন হিন্দু মানুষের আকিদা থাকতে পারে, সেটা তার আকিদা
কিন্তু মুসলিমের আকিদা হচ্ছে ঈমান । যেমন কেউ মনে করলো যে রাসূল
সাল্লাল্লাহু সাল্লাম তাদের মজলিসে এসেছে, কিন্তু তিনি বর্তমানে কনো মজলিসে
আসতে পারেন না, আল্লাহর কিতাব অনুসারে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু কেউ যদি তা
বিশ্বাস করে তাহলে তার ঈমান থাকলো না।
অন্যদিকে কেউ যদি মনে করে ইসলামের বিধি বিধানের বাইরে ও আরো কিছু বিধান
রয়েছে, যেমন ইসলামের মৌলিক সাতটি বিষয়ের বাইরেও কেউ যদি মনে করে ইসলামের মৌলিক
বিষয় আটটি তাহলে তার আকিদা থাকলো না।
রেফারেন্স- Professor: Dr. Abu Bakar Muhammad Jakaria
শেষ কথাঃ
সর্বশেষ এটাই বলতে পারি যে আমরা যতই ইবাদত করি সর্বপ্রথম আমাদের আকিদা ঠিক রাখতে
হবে। এটা ছাড়া আমরা যতই ইবাদত করি, তাহাজ্জুদ পড়ি, নামাজ আদায় করি কোনটাই কাজে
আসবে না। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যাতে এই বিম থেকে সরে না যায়, তাই
তাদেরকে এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য উৎসাহিত করুন।
আমরা যারা ওয়েস্টার্ন কান্ট্রিতে বসবাস করি, সেখানে ইসলামের ছোঁয়াটুকু নেই
বললেই চলে। তাই নিজেদের কলবকে সতেজ রাখার জন্য বেশি বেশি এই ধরনের আর্টিকেল পরুন
এবং বাচ্চাদেরকে সচেতন করুন। অথবা পরবর্তী প্রজন্ম থেকে ইসলাম সরে যেতে খুব বেশি
সময় লাগবে না।
ইজনাির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url