সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিকার কি-বিস্তারিত জানুন
সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিকার কি কি জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
সিজার একটি নিরাপদ পদ্ধতি হলেও অসচেতন হওয়ার কারণে কাটা স্থানে ইনফেকশন বা
সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। আর এই ইনফেকশন সনাক্ত করা জরুরী, কারণ একটি মায়ের
স্বাস্থ্যকে বিপদজনক অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে গুরুত্বহীনতায়।
আসুন আমরা একটু সচেতন হই। সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা জন্মানোর সময় মায়ের শরীরে
একটি কৃত্রিম কাটা তৈরি করা হয়। আর এই কাটা স্থানে জীবাণু প্রবেশ করার সম্ভাবনা
থকে। সিজারের পর ইনফেকশন এর লক্ষণ গুলো জেনে নিন এবং কিভাবে সতর্ক
থাকবেন বিস্তারিত জানুন।
সূচিপত্রঃ সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিকার
- সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিকার কি
-
সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ
-
সিজারের পর ইনফেকশনের প্রতিকার বা রক্ষা পাওয়ার নিয়ম
-
সিজারের পর ইনফেকশনের কারণ
- সিজারিয়ান অপারেশনের কাটা স্থানে যত্ন
-
সিজারের পর ইনফেকশনের চিকিৎসা
-
সিজারের পর খাবারের তালিকা
-
সিজারের পরে কি কি খাওয়া যাবে না
-
সিজারের পর ক্ষত শুকাতে কতদিন সময় লাগে
-
সিজারের পর কত দিনের মধ্যে ইনফেকশন হতে পারে
সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিকার কি
বর্তমানে বাচ্চা প্রসবের পদ্ধতি হিসেবে সিজার খুবই কমন একটি বিষয়। বাচ্চা
প্রসবের এই পদ্ধতিকে সি সেকশন বলা হয়। ডাক্তারেরা সাধারণত এই পদ্ধতি অবলম্বন
করার পরামর্শ দেয় না। বর্তমানে অনেকেই নরমাল ডেলিভারি করার মানসিক
প্রস্তুতি নিলেও অনেক পরিস্থিতি অনুযায়ী সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা প্রসব করাতে
হয়। তখন পরিস্থিতি অনুযায়ী ডাক্তারেরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
বর্তমানে সিজার বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে পূর্ব প্রস্তুতি না নেওয়া।
প্রেগনেন্সি জার্নিতেই অনেকেই মানসিকভাবে প্রস্তুত হয় সিজার ডেলিভারি করানোর
জন্য। আর এই সিজারের ফলে ইনফেকশন এর মত ভয়াবহ অবস্থায় পড়তে হয়। সিজারের
ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিকর জানলে আপনি খুব সহজেই এই বিপদ থেকে রক্ষা পাবেন।
সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিকার কি-বিস্তারিত জানুন।
সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ
- অতিরিক্ত ব্যথা হলে। সাধারণত সিজারের পরে ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক কিন্তু অতিরিক্ত ব্যথা ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে।
-
কাটা স্থানে লালচে বা ফুলে যাওয়া।
-
সিজারের পর কত স্থান থেকে পুঁজ বা দুর্গন্ধ বের হয়।
- সিজারের পর হালকা জ্বর নরমাল তবে অতিরিক্ত ইনফেকশনের লক্ষণ।
-
সাধারণ ক্লান্তি ও দুর্বলতা দেখা দেয়। তবে যদি দৈনিক কাজ করতে অসুবিধা হয়,
তবে ইনফেকশনের লক্ষণ।
-
মূত্রত্যাগ করার সময় ব্যথা বা জ্বালাপোড়া হলে তা মূত্রনালীর সংক্রমণের
লক্ষণ।
- অতিরিক্ত শ্বাসকষ্ট বা দ্রুত শ্বাস সমস্যা হলে, ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে।
সিজারের পর ইনফেকশনের প্রতিকার বা রক্ষা পাওয়ার নিয়ম
- কাটা স্থানে ঘন ঘন গ্লজ বা ব্যান্ডেজ পরিবর্তন করুন।
-
ধোয়ার সময় সতর্ক থাকুন যাতে করে পানি বা ময়লা কোনভাবে না প্রবেশ করতে
পারে।
-
ক্ষতস্থান ভালোভাবে প্রতিদিন ধৌত করুন।
-
সিজারের স্থানে হাত দিতে গেলে অবশ্যই হাত পরিষ্কার রাখুন।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
-
সঠিক খাদ্য অভ্যাস গড়ে তুলুন। ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খান-ফলমূল,
শাকসবজি ইত্যাদি।
-
ফিজিক্যাল থেরাপি ও হালকা ব্যায়াম করুন।
- আরামদায়ক পোশাক পরিধান করুন।
সিজারের পর ইনফেকশনের কারণ
সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিকার কি জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরী। সিজারের
মাধ্যমে শিশু জন্মানোর সময় একটি অপারেশন এর প্রয়োজন হয়। সঠিক পরিচর্যা না
করার কারণে জীবানু প্রবেশের সম্ভাবনা থাকে। সিজারের পরে অনেক কারণে ইনফেকশন
হতে পারে। যেমন-
কাটা স্থানে যথাযথ যত্ন না নেওয়া। কাঁটা স্থান সর্বদাই পরিষ্কার ও জীবাণু
মুক্ত কাটতে হবে। ইনফেকশন হওয়ার সবচাইতে বড় কারণগুলি মধ্যে একটি কাটা
স্থানে যত্ন না নেওয়া।
মায়ের ইমিউন সিস্টেম দুর্বলতা থাকার কারণে ইনফেকশন হতে পারে। সাধারণত হয়
অন্যান্য লোক যদি আগে থেকে শরীরে থাকে। যেমন-ডায়াবেটিস বা শ্বাসকষ্ট জনিত
রোগ।
আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে সিজারের পর ইনফেকশনের কারণ হতে পারে। বাংলাদেশে
গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া জীবাণু অনুকূল পরিবেশ। সুতরাং সিজারের রোগীকে অতিরিক্ত
গরম বা অতিরিক্ত ঠান্ডা থেকে দূরে রাখুন।
সিজারিয়ান অপারেশনের কাটা স্থানে যত্ন
সিজারিয়ান অপারেশনের পর কাটা স্থান যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। কিভাবে
কাটা স্থানের যত্ন নিতে হয় নিম্নে দেওয়া হল।
- সেলাইয়ের স্থানে আলতো ঘষে পরিষ্কার করতে হবে।
- ঢোলা ও আরামদায়ক সুতির কাপড় পরিধান করতে হবে।
-
কাপড়ের সাথে ক্ষতস্থানে ঘষা লাগলে, ব্যান্ডেজ লাগিয়ে নিতে হবে।
-
কাটা স্থানে ইনফেকশন হচ্ছে কিনা বারবার খেয়াল রাখতে হবে।
-
ব্যথা বেশি হলে সাধারণত প্যারাসিটামল ওষুধ খেলেই কমে যাবে।
যদি ক্ষতস্থান লাল হয়ে যায় বা ব্যথা হয় তাহলে চিকিৎসকে আবহিত করুন। ওষুধ
ঠিকমতো সেবন করুন। হাসপাতালের ছাড়পত্রে দেওয়া নির্দেশনা মেনে
চলুন।
সিজারের পর ইনফেকশনের চিকিৎসা
সিজারের পরে যদি ইনফেকশন যদি ধরা পড়ে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পদ্ধতি
অবলম্বন করতে হবে। এর বাইরে ও ঘরোয়াভাবে সতর্ক থাকলে ইনফেকশন থেকে
খুব দ্রুত উন্নত করা সম্ভব। আসুন আমরা বিস্তারিত জেনে নেয়-
- ইনফেকশন হলে অবশ্যই এন্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে। ডাক্তারের প্রেসক্রাইব অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক সেবন করুন।
-
ক্ষতস্থানে পুঁজ বা ফুলে না যায় খেয়াল রাখুন।
-
ক্ষত স্থানের সুরক্ষিত রাখতে, বিশেষ ড্রেসিং ব্যবহার করুন।
-
চিকিৎসক আপনাকে সঠিক যত্ন ও ঘরোয়া পদ্ধতি নির্দেশনা দিতে পারে। যেমন-
পর্যবেক্ষক ও সবসময় ফলো করতে হবে।
সিজারের পরে ইনফেকশন হয়ে গেলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ
নিন। সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিকার কি আর্টিকেলটি পড়ে
সিজারের ইনফেকশনের ভয়াবহতা থেকে বাঁচুন।
সিজারের পর খাবারের তালিকা
- প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম খাবার খেতে হবে। প্রোটিন নতুন টিস্যু কোষ গঠনে সাহায্য করে। অন্যদিকে ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁত তৈরি করে। সিজারের পরে আপনার ডায়েট প্ল্যানে লেবু, ডিম ইত্যাদি যোগ করুন এবং নিজেকে সুস্থ গড়ে তুলুন।
-
বাদামী রুটি, পাস্তা এবং বাদামির চালসহ পুরো সর্ষের খাবার গুলো খেতে
পারেন। এতে পেট বাড়বে না। আইরন ফাইবার এবং ফলিক এসিড হল শিশুদের
প্রাথমিক এর বিকাশের পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি।
-
ভিটামিন এবং খনিজ জাতীয় খাবার খেতে হবে। ভিটামিনের প্রচুর পরিমাণ
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে এবং টিসুম মেরাম ত করতে সহায়তা করে। খাবার
তালিকায় যেমন-কমলালেবু, পেঁপে, তরমুজ, স্ট্রবেরি এবং আঙ্গুরের ইত্যাদি
খেতে পারেন সাথে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খেতে হবে।
- আয়রন যুক্ত খাবার খেতে হবে। আই ডোন্ট বজায় রাখে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা শরীরে এবং প্রেসার এর প্রক্রিয়া চলাচল হারিয়ে যাওয়ার রক্ত পুনরুদ্ধারে সহায়ক হয়।
সিজারের পরে কি কি খাওয়া যাবে না
- মসলা যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। ডাক্তারেরা সাধারণত সিজারের পরে মসৃণ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আপনার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তাই মসলা যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
-
কাঁঠাল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কাঁঠাল খাওয়া আপনার নবজাতকের মধ্যে কোলিকের
ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
-
ঠান্ডা খাবার এড়িয়ে চলুন। যেমন-ঠান্ডা দই, আইসক্রিম, আইসক্রিম-লোডের পানীয়
ইত্যাদি।
-
সবজির মধ্যে ফুলকপি আলু, কম খাওয়া ভালো। কিছু মহিলা এগুলো খাওয়ার ফলে গ্যাস
এবং খোলা অনুভব করে।
-
ডিম এবং দুধ পুষ্টিকর বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু সেগুলো মায়ের
জন্য সব সময় উপযুক্ত নাও হতে পারে। কিছু মহিলাদের ঠান্ডা দুধে পেট ব্যথা হতে
পারে। সমস্যা অনুভব হলে ডিম ও দুধ এড়িয়ে চলুন।
সিজারের পর ক্ষত শুকাতে কতদিন সময় লাগে
সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিকার কি বিস্তারিত জেনে আপনি যদি সিজারের
সময়কাল পার করেন তাহলে অল্প কিছুদিনের মধ্যে কাটা জায়গা শুকিয়ে যাবে। অনেক
সময় দেখা যায় অবহেলার কারণে কাটা কাটা জায়গা শুকাতে সময় লাগে। অথবা
অবহেলার ফলে ইনফেকশন হতে পারে।
সিজারের সময়ে কাটা অংশ পুরোপুরি শুকাতে প্রায় ৬ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
তবে এই একেবারে বাধা ধরা নয়। একেক জনের ক্ষেত্রে কম-বেশি হতে পারে। আপনি যদি
সঠিক পরিচর্যা করেন তাহলে সাধারণত ৬ সপ্তাহ সময় লাগবে।
সিজারের পর কত দিনের মধ্যে ইনফেকশন হতে পারে
সিজারের পর স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরতে প্রায় ১.৫ সময় লাগতে পারে। তবে এই
সময়টা সবার জন্য এক হয় না। আপনি যদি নিয়ম মেনে এই সময়কালটা পার করতে পারেন
তাহলে ইনফেকশনেরও ভয় থাকে না। সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিকার কি
জানলে আপনাকে ইনফেকশনের ভয় পেতে হবে না।
সিজারের পর ইনফেকশনের সম্ভাবনা সাধারণত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বেশি। তবে প্রসবের
পর প্রথম ১০ দিনের মধ্যে ইনফেকশন হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে এরচেয়েও বেশি সময়ে
হতে পারে। তাই সাবধানতা অবলম্বন করুন।
উপসংহারঃ সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ ও প্রতিকার কি?
সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি।
কেননা লক্ষণ গুলো ও প্রতিকার জানা থাকলে আগে থেকেই সচেতন হওয়া যায়। আর এ
সচেতনার মাধ্যমেই একটি সুন্দর সন্তান এর স্বাস্থ্য সুন্দর হয়। সিজারের পর
ব্লিডিং সাধারণত ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে।
এই আর্টিকেলটিতে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া আছে সিজারের পরে ইনফেকশন হলে কি
করনীয় অথবা ইনফেকশন হয়ে গেলে কিভাবে দ্রুত সুস্থতা লাভ করবেন। আশা করি উক্ত
নিয়ম মেনে সিজারের পরে সময়টা ভালোভাবে পার করতে পারবেন। ইনফেকশন ও
প্রতিকারগুলো জেনে জেনে নিন। ধন্যবাদ
ইজনাির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url