খোসকা গাছের উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুন
খোসকা গাছের উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুন সাথে জেনে নিন ব্যবহারের নিয়ম ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত। খোসকা গাছকে অনেক এলাকায় কাক ডুমুর গাছ নামে পরিচিত। অযত্নে বেড়ে ওঠা এই উদ্ভিদ সম্পর্কে আপনি জানলে অবাক হবেন। এই উদ্ভিদ প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন ঔষধি কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
খোকসা গাছকে গ্রামে বিভিন্ন রকম জায়গায় বেশ বড় বড় গাছে আকারে দেখা যায়। এই
গাছটি সাধারণত মানুষ তেমন কোন কাজে লাগায় না। তবে এর ঔষধ দিয়ে গুনাগুন বা
উপকারিতা সম্পর্কে জানলে যে কেউ এর থেকে উপকার নিতে চাইবে। আর এই গাছের
উপকারিতায় যথাযথভাবে পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে নিয়ম অনুসরণ করে এই গাছের ব্যবহার
করতে হবে।
সূচিপত্রঃ খোসকা গাছের উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুন
- খোসকা গাছের উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুন
- খোসকা গাছের উপকারিতা
- খোসকা গাছের ঔষধি গুনাগুন
- খোকসা গাছ ব্যবহারের নিয়ম
- খোসকা গাছের ফলের ব্যবহার
- খোসকা গাছ কি কি কাজে ব্যবহৃত হয়?
- খোসকা গাছ সংগ্রহ করার উপায়
- খোসকা গাছের চাষ
- খোসকা গাছের অপকারিতা
- উপসংহারঃ খোসকা গাছের উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুন
খোসকা গাছের উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুন
খোকসা গাছ বা কাকডুমুর নামে পরিচিত এই উদ্ভিদ মাঝারি আকৃতির
বৃক্ষ। খোকসা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম "Ficus hispida" এটি ফাইকাস
ডুমুর প্রজাতির উদ্ভিদ। এই গাছ অযত্নে অবহেলায় গ্রামে বা বিভিন্ন শহরেও
বেড়ে উঠতে দেখা যায়। তবে এই গাছের ঔষধি গুনাগুনের জন্য বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জন
এখন চাষ করতে দেখা যায়। দেশের বিভিন্ন জেলায় এই গাছকে ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকা
হয় তবে সাধারণত সবাই খোসকা বা কাকডুমুর নামেই চিনে থাকে। এই উদ্ভিদের পাতার
একটি বিশেষত্ব আছে যা শিরিশি কাগজের মতো খসখসে প্রকৃতির।
খোকসা গাছের পাতা দিয়ে গ্রাম অঞ্চলে মাছ পরিষ্কার করার কাজে ব্যবহার
করা হয়। যেমন শিং মাছ, মাগুর মাছ সহ বিভিন্ন রকম পিচ্ছিলভাব জাতীয় মাছকে
খুব সহজে পরিষ্কার করা হয়। এর ফল দেখতে ডুমুর ফুলের মত যা সাধারণত পাখিরা
খেয়ে থাকে। এই গাছ বাংলাদেশ, ভারত, চীন তথা এশিয়ার অঞ্চলে দেখা যায় এবং
অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায়। সাধারণত গ্রীষ্ম মন্ডলী এলাকাসমূহে এই উদ্ভিদকে বেশি
দেখা যায়। এই গাছ মানব দেহের অত্যন্ত উপকারে আসে যা ঔষধি গুন সম্পূর্ণ।
মানুষের জটিল সমস্যার সমাধান হতে পারে এই খোসকা গাছ থেকে যা বিস্তারিত নিম্নে
আলোচনা করা হয়েছে।
খোসকা গাছের উপকারিতা
খোসকা গাছ একটি অবহেলিত উদ্ভিদ তবে এর কিছু উপকারিতা রয়েছে যা মানব দেহের
জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। খোসকা গাছের পাতা মানুষের নিত্যদিনের
প্রয়োজনীয়তা মেটাতে সাহায্য করে। যদি হয়ে গাছের ঔষধি গুনাগুন অনেক তবে এর পাতা
বা ফল মানুষের বা পাখির অনেক প্রয়োজনীয়।
খোসকা গাছের পাতা অত্যন্ত কার্যকরী। পশু জবাই করার পরে, মাংস করা হয়।
তবে মাংসে অনেক সময় পশুর গায়ের পশম লেগে থাকে মাংসে সেগুলো পরিষ্কার
করতে, খোসকা গাছের পাতা জরুরী। খুব সহজেই অল্প পরিমাণ খোসকা গাছের পাতা
দিয়ে সুন্দরভাবে মাংস থেকে পশুর পশম পরিষ্কার করা যায়।
আবার প্রাচীনকাল থেকেই গ্রামেগঞ্জে এই পাতা ব্যবহার করা হয় তৈলাক্ত জাতীয় মাছের
গায়ের চামড়া পরিষ্কার করতে। এটি বর্তমানে বহুল প্রচারিত একটি পদ্ধতি যা মাছ
পরিষ্কার করতে খুবই সাহায্য করে।
খোসকা গাছের ফল অত্যন্ত জনপ্রিয় পাখি খাবার হিসেবে। এই গাছের ফল সাধারণত মানুষে
খায় না। এই গাছের ফল পাখিরাও অত্যন্ত পছন্দ করে থাকে।
খোসকা গাছের ঔষধি গুনাগুন
খোসকা গাছ প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। মূলত
প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন ভেষজ ঔষধ তৈরি করতে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকগণ এই গাছের
ব্যবহার করে থাকে। আসুন আমরা জেনে নেয়, কোন কোন কাজে খোসকা গাছ ব্যবহার হয়।
- রক্তপরিষ্কারক
- রক্ত আমাশয়ে হিতকর
- বমনকারক
- সোরিয়াসিস
- জন্ডিস
- নাক, মুখ দিয়ে রক্ত পড়া
- জ্বর নিবারণ করে
- ডায়রিয়া ভালো হয়
- দাঁত ব্যথা ভালো হয়
- কুকুরের বিষক্রিয়া দূর করে
- জন্ডিস ভালো হয়
- প্রস্রাব যন্ত্রণা ভালো হয়
- চোখের নিচে, চোখের উপরে কালো দাগ ভালো হয়
খোকসা গাছ ব্যবহারের নিয়ম
খোসকা গাছ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে যা নির্ভর করে আপনি কোন অংশটি কোন
কাজে ব্যবহার করবেন। খোসকা গাছের ব্যবহার নিম্নে দেওয়া হল।
- জ্বর নিবারণের জন্য খোসকা গাছের ছালের গুড়া ১-২ গ্রাম মাত্রায় দিনে তিন থেকে চারবার খাওয়াতে হয়। অল্পমাত্রায় খেলে এটি টনিকের কাজ করে থাকে।
- কুকুরে কামড়ালে, কুকুরে কামড়ালে খোসকা গাছের গোড়ার শিকড় থেকে চাল তুলে ধুতবার নিজের সাথে বেটে কামড়ের স্থানে প্রলেপ দিলে ভালো হয়।
- ডায়রিয়া চিকিৎসায় ব্যবহার ব্যবহার করা হয়।
খোসকা গাছের ফলের ব্যবহার
খোসকা গাছের ফলের ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন কাজে বিশেষ করে পাখিদের খুবই
জনপ্রিয় একটি খাবার এই গাছের ফল। এই ফল বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন কাজে কাচা এবং
শুকনা অবস্থায় ব্যবহার করা হয়। কাঁচা এবং শুকনো অবস্থায় খাওয়া যায় এমনকি
ওটসের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। খোসকা এর ফলের অন্যান্য
ব্যবহার নিম্নে দেওয়া হল।
- দাঁত ব্যাথা হলে, খোসকা ফলের কোষ বের করে দাঁতের গোড়ায় লাগালে খুব দ্রুত ভালো হয়।
- তরকারি, খোসকা ফল তরকারি হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়।
- বিভিন্ন পাখির জন্য এই ফল খাবার সংগ্রহ করা হয়।
খোসকা গাছ কি কি কাজে ব্যবহৃত হয়?
খোসকা গাছের উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুন সাথে জেনে নিন কি কি কাজে ব্যবহৃত
হয় এই গাছ। খোসকা বা কাকডুমুর গাছের পাতা বা অন্যান্য অংশ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। এই গাছের পাতা যেমন বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয় তা আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি। সাধারণত ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয় রস বিষনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
খোসকা গাছ খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন- খোসকা গাছের ফল দেখতে ছোট হলেও ফল খাওয়া যায় যা খেতে ও সুস্বাদু। আবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই ফল দিয়ে তরকারি ও ভর্তা রান্না করে থাকেন।
এই গাছের ডালপালা ও কাঠ খড়ি বা জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এই গাছের ফল সুস্বাদু হওয়ায় পাখিদের অন্যতম পছন্দের খাবার খোসকা ফল।
খোসকা গাছ সংগ্রহ করার উপায়
খোসকা গাছ সম্পর্কে ইতিমধ্যে আমরা উপকারিতা। তবে গ্রামগঞ্জে বিভিন্ন জায়গায় এই গাছ দেখা গেলেও শহরগুলোতে এই গাছ দেখতে পাওয়া যায় না। দেশের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে রাস্তার আশেপাশে ও বিভিন্ন জঙ্গলে খোসকা বা কাক ডুমুর গাছের দেখা পাওয়া যায়। বর্তমানে গাছ সংগ্রহ করার বড় মাধ্যম হচ্ছে অনলাইন। এই অনলাইনে বিভিন্ন পেজে বা ওয়েবসাইটে এই গাছের ঔষধ পাওয়া যায়।
তবে খোসকা গাছ সংগ্রহের জন্য, অবশ্যই আপনি নার্সারি বা স্থানীয় বাজার থেকে এই গাছের চারা অথবা গাছের ডাল, ফল ও প্রয়োজনীয় অংশ আপনি কিনতে পারবেন। তবে এই গাছের ডাল থেকে চারা তৈরি করা যায় না। গাছের ফল থেকে চারা তৈরি করা হয়।
খোসকা গাছের চাষ
খোসকা গাছের উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে ইতিমধ্যেই আমরা জেনেছি, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এই গাছ সংগ্রহ করা কিছুটা কঠিন। তাই খোসকা গাছের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে গেলে অবশ্যই খোসকা গাছ চাষ করতে হবে। এই গাছের চারা আপনি নার্সারি থেকে সংগ্রহ করতে পারেন। নার্সারি থেকে চারা কেনার সময় গাছের স্বাস্থ্য, পাতার রং এবং কান্ড অবশ্যই ভালোভাবে দেখে নিন।
এই গাছ সাধারণত টবে অর্থাৎ ছাদ বাগানে চাষ করা যায় না। খোসকা গাছ বিশাল আকারের হতে পারে। এই গাছ চাষ করতে তেমন পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। শুধুমাত্র পছন্দের গাছ অর্থাৎ সুস্থ গাছ মাটিতে লাগান। নিয়মিত পানি দিন ও অল্প পরিমাণের সার দিন।
খোসকা গাছের অপকারিতা
খোসকা গাছের উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে জেনে, অপকারিতা জানাও অত্যন্ত জরুরী। কারণ প্রতিটা জিনিসেরই উপকারিতা থাকলে তার কিছু না কিছু অপকারিতা রয়েছে। খোসকা গাছের পাতা ও অন্যান্য অংশ বিভিন্ন ভেষজ গুনেসমৃদ্ধ। এর উপকারিতা সম্পর্কে আমরা জেনেছি। তবে এর কিছু অপকারিতা রয়েছে তা যেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সাধারণত আমরা এই গাছ বিভিন্ন সমস্যার কারণে ব্যবহার করে থাকি। যে সকল সমস্যার সমাধানে খোসকা ব্যবহার হয় তা নির্দিষ্ট পরিমাণে এই গাছের বিভিন্ন অংশের প্রয়োজন পড়ে। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে বা ব্যবহার করলে আপনার শরীরে বিভিন্ন প্রকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই ঔষধি কাজে ব্যবহার করার জন্য অবশ্যই নির্দিষ্ট পরিমাণ ব্যবহার করুন।
উপসংহারঃ খোসকা গাছের উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুন
খোসকা গাছের উপকারিতা সহ এই গাছ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রকার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে। আশা করি আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ে, এই গাছ থেকে যথাযথ উপকার নিবেন। এই গাছ যেমন মানুষের জন্য অত্যন্ত উপকারী ঠিক তেমনি এই গাছ পরিবেশের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কারণ হিসাবে উল্লেখ্য হলো যে, বিভিন্ন বন্যপ্রাণী ও ক্যাসোয়ারি পাখির খাদ্য।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অযত্নে অবহেলায় যেখানে সেখানে জন্মায় এই খোসকা গাছ। তবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই গাছের গুরুত্ব অনেক। প্রাচীনকাল থেকেই ঔষধি গুনসম্পন্ন গাছ। প্রাচীন কাল থেকেই এই গাছের ফল ও পাতা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাই এই খোসকা বা কাক ডুমুর গাছ থেকে যথাযথ উপকার পেতে অবশ্যই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন। ধন্যবাদ



ইজনাির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url