আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা ও খাওয়ার নিয়ম জানুন

আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা ও খাওয়ার নিয়ম জানুন, ছোট থেকে বড় সব বয়সের মানুষের খাবারের তালিকা দেওয়া হয়েছে। আমাশয় রোগীদের খাবার তালিকায় বিশেষ সতর্ক অবলম্বন করা উচিত। কারণ সাধারণত আমাশয় হওয়ার কারণ-পচা বাসি খাবার, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদি।

আমাশয়-রোগীর-খাবার-তালিকা-ও-খাওয়ার-নিয়ম-জানুন

আমাশয় রোগীদের উপযুক্ত খাদ্য খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। কারণ উপযুক্ত খাবার এবং ওষুধ পারে রোগের প্রতিক্রিয়া কমাতে ও দ্রুত সুস্থ হয়। তাই অবশ্যই খাবারের তালিকা আমাশয় রোগীকে খাওয়ানো জরুরী। এখানে বিস্তারিত দেওয়া হয়েছে কোন সময় কোন রোগীকে কি খাবার দিতে হবে।

সূচিপত্রঃ আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা ও খাওয়ার নিয়ম জানুন

আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা ও খাওয়ার নিয়ম জানুন

আমাশয় রোগের জন্য খাবারের তালিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সঠিক খাবার রোগীকে নিয়মিত খাওয়ালে হজম শক্তি ঠিক থাকে এবং শরীরের বিভিন্ন রকম পানি শূন্যতা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। আমাশয় হচ্ছে অন্ত্রের একটি প্রবাহজনক রোগ ও রক্তের সাথে গুরুতর ডায়রিয়া। সাধারণত পরজীবী প্যাথোজেন এবং ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এই রোগ প্রভাব বিস্তার করতে পারে। আমাশয় রোগের সাধারণ লক্ষণ, দিনে তিনবার বা তার অধিক মলত্যাগ করা।
সাধারণত আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা জানা থাকলে খুব দ্রুত এই রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। বর্তমানে আমাশয় রোগে আক্রান্ত হতে পারে যে কোন ব্যক্তি বা যে কোন বয়সের মানুষের। যে কোন মানুষ তাদের জীবনের যেকোনো সময় আমাশয় হতে পারে এবং সঠিক স্বাস্থ্যবিধির ব্যবস্থা অনুসরণ না করলে হতে পারে। আর এই রোগ থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে খাবারের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই আসন কোন নিয়মে কিভাবে কি কি খাবার খেতে হবে? সেসব বিস্তারিত জেনে নেয়

আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা

আমাশায় রোগীর খাবার তালিকা জেনে নিন। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা যে সকল খাবার রোগীদের খাওয়ার নির্দেশনা দিয়ে থাকেন সেই মোতাবেক নিম্নে খাবার তালিকা দেওয়া হল। এ সকল খাবার রোগীদের দ্রুত সুস্থ করতে অত্যন্ত ভূমিকা রাখে। খাবারের তালিকা দেখে নিন এবং পরিমাণ মতো নিয়মিত আমাশায় রোগীর খাবার খাওয়ান।
  • সাদা ভাত
  • মুড়ি
  • আলু সেদ্ধ
  • সেদ্ধ মাংস
  • খিচুড়ি
  • ডাল
  • সবজি/সবজির সুপ
  • মিষ্টি কুমড়া সবজি
  • লাউ সবজি
  • পেঁপে সবজি
  • সেমাই (নরম/পাতলা)
  • সেদ্ধ ডিম (শুধুমাত্র সাদা অংশ)
  • ডাবের পানি
  • পাউরুটি (নরম)
  • পাকা কলা
  • রং চা
  • টক দই
  • হালকা কুসুম গরম পানি
  • আপেলের জুস সাথে অন্যান্য ফলের জুস খাওয়া যেতে পারে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী।

বাচ্চাদের আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা

অসাধারণ তো বড়দের জন্য যে খাবার প্রযোজ্য আমাশায় রোগীদের জন্য, সেগুলোই খাবার খেতে পারেন বাচ্চারা। তবে বিশেষ কিছু নিয়মে খাবার গুলো বানানোর ও বাচ্চাদের খাওয়ানো উচিত। বাচ্চাদের আমাশয় হলে সহজপাচ্য নরম খাবার। নরম খাবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমাশয় আক্রান্ত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে। তবে সব ধরনের রোগীদের জন্যই নরম খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চাদের আমাশয় রোগীর খাবারের তালিকা নিম্নে সংক্ষেপে দেওয়া হল।
  • সাদা ভাত (নরম), রুটি/পাউরুটি (নরম)ঃ বাচ্চাদের এগুলো হজম করতে খুব সহজ হয়।
  • কলাঃ কলা সহজে হজম হয় যা বাচ্চাদের জন্য অত্যন্ত জরুরী।
  • বিভিন্ন রকম সেদ্ধ সবজি
  • বিভিন্ন রকমের ফলের জুস। যেমনঃ আপেল
  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। মনে রাখবেন আপনি যে পানি পান করছেন সেটি বিশুদ্ধ আছে কিনা।

আমাশয় রোগীর খাবার খাওয়ার নিয়ম

আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা ও খাওয়ার নিয়ম জানুন কারণ নিয়ম অনুসারে খাবার খেলে দ্রুত রোগমুক্ত হওয়া যায়। আমাশয় রোগ এমন একটি রোগ যে, খাবার সঠিকভাবে খেলে বা কোন কোন ধরনের খাবার খাবেন নির্বাচন সঠিক হলে এই রোগ থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া যায়। এ সকল নিয়ম অনুসরণ করলে আমাশয় এর উপসর্গ কমানো এবং দ্রুত আরোগ্য লাভের সাহায্য করে।
আমাশয় হলে হজম প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে দেয়। সাধারণত বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, আমাশয় রোগীর খাবার হালকা ও সহজে হজম হয় এমন খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। ভাত, ডাল, সবজি, আলু, কলা,  মাংস, ইত্যাদি খুব ভালো মতো সেদ্ধ করে রোগীকে খাওয়াবেন।

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও তরল পদার্থ খাওয়া অত্যন্ত জরুরী আমশার রোগীদের। কেননা এ ধরনের রোগে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও লবণ পেরিয়ে যায়। যার ঘাটতি কমাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
আমাশয়-রোগীর-খাবার-তালিকা-ও-খাওয়ার-নিয়ম-জানুন

আমাশয় রোগীর জন্য কোন খাবার সবচেয়ে ভালো?

আমাশয় রোগীদের জন্য কোন কোন খাবার সবচেয়ে ভালো এটা জানা অত্যন্ত জরুরী। কারণ আমাশয় রোগীর দ্রুত আরোগ্য পেতে হলে অবশ্যই সঠিক নিয়মে সঠিক খাবার খাওয়া উচিত। সঠিক নিয়মে অল্প পরিমাণ খাবার খেলেও সেখান থেকে দ্রুত কার্যকারিতা পাওয়া যায়। এখন আমরা জেনে নেয়, কোন কোন খবর আমাশয় রোগীর জন্য খুবই কার্যকর।
  • ভাতঃ হালকা নরম সিদ্ধ ভাত। সহজে হজম হয় এবং শরীরে শক্তি যোগায়।
  • পাকা কলাঃ পাকা কলাই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। শরীরের দ্রুত শক্তি পেতে ও দুর্বলতা কমাতে পাকা কলার বিকল্প নেই।
  • আলু সেদ্ধঃ দ্রুত হজম হয় আলু সিদ্ধ। এটি একটি পুষ্টিকর খাবার যা আমাশয় রোগীদের জন্য খুবই কার্যকর।
  • সবজিঃ বিভিন্ন ধরনের সেদ্ধ করার সবজি খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমাশয় রোগীদের জন্য। বিভিন্ন রকম সবচেয়ে অল্প পরিমাণ সেদ্ধ করে নিয়মিত রোগীকে খাওয়াতে পারেন।

আমাশয় রোগীর কি ধরনের খাবার খাওয়া যাবে না ?

আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা ও খাওয়ার নিয়ম জানুন এবং জেনে নিন কোন কোন ধরনের খাবার খাওয়া যাবে না। মূলত আমাশয়ের রোগীকে উচ্চ ক্ষয় পর্যন্ত খাবার খাওয়া যায় না। যেগুলো ডাক্তার কর্তৃক একেবারেই নিষিদ্ধ বলা চলে। এই ধরনের খাবার খাওয়া রোগীদের জন্য বিপজ্জনক কারণ এ সকল খাবার হজমের সমস্যা হতে পারে ও আমাশয়ের উৎসর্গ বাড়িয়ে তুলতে পারে।

মসলাযুক্ত খাবার বা তৈলাক্ত খাবারঃ মসলাযুক্ত খাবার বা তৈলাক তো খাবার পেটের উচ্চচাপ সৃষ্টি করে যা আমাশয় রোগীর জন্য খুবই বিপদজনক।
উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবারঃ বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের শাক সবজির মধ্যে উচ্চফাইবার থাকে সেগুলো অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে এবং বিভিন্ন রকম সালাত সালাদ ফাইবার সমৃদ্ধ হতে পারে সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। উচ্চ খাইবার যুক্ত খাবার আমাশয় রোগীর জন্য একেবারেই নিষিদ্ধ।

দুগ্ধজাত পণ্য খাবারঃ দুধ ও দুধের তৈরি যে সকল খাবার রয়েছে সে সকল খাবার এড়িয়ে চলুন। যেমন-আইসক্রিম, দুধ, দই ইত্যাদি।

আমাশয় রোগীদের কতদিন নিয়ম মেনে খাবার খেতে হয়?

আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা ও খাওয়ার নিয়ম জানুন এবং সাথে জেনে নিন আমাশয় রোগীদের কতদিন খাবার খেতে হয়। মূলত রোগের তীব্রতা অনুযায়ী ওষুধ ও অন্যান্য খাবার নিয়ম অনুসরণ করে খেতে হয়। আমাশয়ের তীব্রতা অনুযায়ী ডাক্তার নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। সাধারণত ১ থেকে ২ সপ্তাহের জন্য নিয়ম মেনে খাবার খাওয়ার কথা বলে থাকেন।

তবে এটি আমাশয় রোগীর পরিস্থিতির ওপর বিবেচনা করে কোন কোন সময় এর থেকেও বেশি সময় ধরে নিয়ম অনুসারে খাবার খেতে হয় ও সাথে ওষুধ সেবন করতে হয়। বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও একই রকম নিয়ম অবলম্বন করা হয়। তাই আপনি যদি দ্রুত সুস্থ হয়ে যান তারপরও নিয়ম অনুসারে অন্তত ১ সপ্তাহ চলতে হবে।

আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

আমাশয় রোগের চিকিৎসা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী করা উচিত। তবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে রোগের লক্ষণ গুলি উপশম করতে সাহায্য করে। কিছু ঘরোয়া পদ্ধতিতে এই রোগ দূর করা সম্ভব যা নিম্নে দেওয়া হলো।
  • বেত ফলঃ বেত ফলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, পটাশিয়াম এবং পেকটিন। যাদের পুরনো আমাশয় রয়েছে তাদের জন্য বেত গাছের শাঁস নিয়মিত খেলে দ্রুত আমাশয় ভালো হয়।
  • পানি পান করার নিয়মঃ আমাশয় রোগের কারণে প্রচুর পরিমাণে শরীর থেকে পানি বের হয়। তাই নিয়মিত বেশি বেশি পানি পান করা অত্যন্ত জরুরী এবং স্যালাইন পান করুন।
  • ডাবের পানিঃ ডাবের পানি শরীরের ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে তাই আমাশয় রোগের ডাবের পানি পান করা অত্যন্ত জরুরী।
আমাশয়-রোগীর-খাবার-তালিকা-ও-খাওয়ার-নিয়ম-জানুন

আমাশয় কি জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে?

আমাশয় রোগীর জন্য ব্যাসিলারি ডিসেন্ট্রি মত সমস্যা হতে পারে কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে। বিভিন্ন রকম জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে এই সমস্যার জন্য তবে এগুলো যে কারো হতে পারে। যে সকল জটিলতা হতে পারে যেমন- ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব ও বমি এবং উচ্চ জলের সাধারণ লক্ষণ গুলি ছাড়াও রোগীর পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করতে পারে।

আমাশয় গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যাদের বয়স অধিক এবং শিশুদের ক্ষেত্রে। এবং শরীর দুর্বল লোকের ক্ষেত্রে বেশি সমস্যা হতে পারে। তবে মাঝারি বয়স্ক লোকের শরীরের শক্তি বেশি থাকা ফলে এ সমস্যা খুব অল্প পরিমাণে দেখা যায়। এ সকল সমস্যার জন্য বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশু।

কিভাবে আমাশয় প্রতিরোধ করা যায়? 

আমরা অনেকেই আগে থেকে সচেতন হলে অবশ্যই আমাশয় এর মত রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব। তবে আমাশয় প্রতিরোধের জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত জরুরী। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চললে এ সকল রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় দ্রুত ও নিরাপদ খাবার ও পানি গ্রহণ করার এবং সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে না থাকা ইত্যাদি আমাশয় প্রতিরোধ করতে পারে।

হাত পরিষ্কার রাখুনঃ খাবার তৈরি করার সময় বা খাবার খাওয়ার আগে অবশ্যই হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। এবং বাথরুম ব্যবহারের পর অবশ্যই সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করে নিন।

উপসংহারঃ আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা ও খাওয়ার নিয়ম জানুন

আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা ও খাওয়ার নিয়ম জানুন এবং এর থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়ার উপায় গুলো জেনে নিন। আমাশয় হল একটি ডায়রিয়ার একটি সাধারন রূপ যা শরীরের বিভিন্ন শূন্যতা তৈরি করতে পারে। তবে এটি ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই কারণ এই রোগ যে কোনো মানুষের যে কোন বয়সে হতে পারে।

আমাশয়ের কারণ এবং উপসর্গগুলি একজন রোগীর মধ্যে ব্যবস্থাপনা নির্দেশ করে যা অ্যান্টিবায়োটিক প্রশাসন বা আইভী ওষুধের মাধ্যমে হতে পারে। তাই অবশ্যই আপনাকে আমাশয় রোগের চিকিৎসা হিসাবে প্রথমেই খাবারের নিয়ম জেনে খাবার খেতে হবে যাতে করে কোনভাবেই শরীরের শূন্যতা তৈরি না হয়। খবরের নিয়ম জেনে খাবার খেয়ে সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ইজনাির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url